• 01919612090
  • consumer.crb@gmail.com

Concept Paper of CRB

সিআরবি’র ধারণা পত্র

কাউন্সিল অব কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশসিআরবি কী ?

সিআরবি একটি অরাজনৈতিক ও অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী ভোক্তা অধিকার সংগঠন। ক্রেতা সুরক্ষার বেসরকারী উদ্যোগ বা ভলান্টরি মুভমেন্ট। স্বেচ্ছাসেবী ভোক্তা ও মানবাধিকার সংগঠন-সেলফ এইড ফাউন্ডেশনের ক্রেতা  অধিকার সচেতনতা ও গবেষণা প্রকল্প। এই সংগঠনটি গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

CRB Complain Apps :

এইটি সংগঠনের একটি অভিযোগ এ্যাপস। ১৫ মার্চ বিশ্ব-ভোক্তা অধিকার ২০১৯ সাল থেকে এ্যাপসটি সার্ভিসে আছে:  আপনি যদি কোন পণ্য ক্রয় করে বা সেবা নিয়ে প্রতারিত হলে বা ভোক্তা অধিকার লঙ্ঘনের শিকার হন তাহলে  : CRB Complain Apps-এর মাধ্যমে আপনার এনড্রয়েড মোবাইল ফোন দিয়ে অনলাইনে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। সপ্তাহের ৭দিন এবং ২৪ ঘন্টা। Google Store থেকে এই এ্যাপসটি ডাউনলোড করা যাবে। আপনার অভিযোগটি নির্ধারিত জেলার পাশাপাশি অভিযোগের সিসি কপি যাবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি মহোদয়ের দপ্তরে। তবে রশিদ সহ ৩০দিনের মধ্যে এই অভিযোগ দায়ের করতে হবে।

সিআরবি এব্রিভিশন :

সিআরবি হলো : কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশ। তবে সাংঠনিক ব্যাখ্যা বাংলায় : ‘কাউন্সিল অব কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশ-সিআরবি, ইংরেজিতে : Council of Consumer Rights Bangladesh(CRB) সংক্ষেপে সংগঠনের নাম  লেখা হবে : সিআরবি/ CRB এবং আন্তর্জাতিক শাখার ক্ষেত্রে  লেখা হবে : সিআরবি-ইন্টারন্যাশনাল।

সংগঠনের আইন গত আবস্থান:

* Commerce Ministry: Joint Stock Reg.No. S-13704/2021, Date : 04/10/2021

* Social Welfare Ministry : Social wel. Reg. No.Chatto: 2078/98, Date : 03/06/1998

* Youth and Sports Ministry : Youth Dev. Reg. No.: Chatto Talika 97, Date : 12/07/1998

* Ministry of Industries : BSCIC Reg. No. :Cha. 2517,  Date : 06/06/2006

 যোগাযোগ কেন্দ্র :

এডমিন অফিস : ১২৪, কাজীর দেউরী সিডিএ মর্কেট, ৩য় তলা, এস.এস খালেদ রোড, চট্টগ্রাম-৪০০০। ই-মেইল : consumer.crb@gmail.com   ফেসবুক পেইজ : https://www.facebook.com/vokta.adminpage,  ওয়েব সাইট : https://consumerrightsbd.org মোবাইল : ০১৯১৯-৬১২০৯০, ০১৮১৯-৬১২০৯০, অফিস : ০১৫০০-৬১২০৯০, সিআরবি হটলাইন : ০৯৬৩৮৬৩৬৩১৬

প্রজেক্ট হেডকোয়াটার : # বাসা নং-৩, # ৩য় তলা, # রোড নাং-১৬, সেক্টর -১১, উত্তরা মডেল টাইন, ঢাকা-১২৩০। মোবাইল : ০১৬৭৩-১৭৯৯৪০।

বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী

কাউন্সিল অব কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশ-সিআরবি’র অগ্রযাত্রা

জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী ভোক্তা ও মানবাধিকার সংগঠন সেলফ এইড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ডিজাইনার কে.জি.এম সবুজের সাংগঠনিক পরিকল্পনায় প্রতষ্ঠিত হয় কাউন্সিল অব কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশ-সিআরবি। সিআরবি একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং ক্রেতা সুরক্ষার বেসরকারী উদ্যোগ। সেলফ এইড ফাউন্ডেশনের ভোক্তা অধিকার সচেতনতা ও গবেষণা প্রকল্পভূক্ত সতন্ত্র সংগঠন হিসাবে ১৬ অক্টোবর ২০০৭ইং সিআরবি’র প্রতিষ্টিত হয় । ভারতীয় উপমহাদেশের বরেণ্য বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেন-এর সহযোদ্ধা ও সেলফ এইড ফাউন্ডেশনের প্রয়াত চেয়ারম্যান বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী’র ১২০ মোমিন রোডস্থ বাসভবন বিপ্লবী কুটিরে জনসচেতনতা ও গবেষণা মূলক এই প্রকল্প সংগঠনের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়। বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী সিআরবি’র প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বর্তমানে দেশের ৮টি বিভাগের ৪৩টি জেলায় স্বেচ্ছাসেবক/কনজিউমার এক্টিভিস্টদের মাধ্যমে ক্রেতা অধিকারে জন-সচেতনতা ও গবেষণায় কাজ করছে। নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধান ও ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ সংস্কার এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবীতে গণ-স্বাক্ষর সংগ্রহের কাজ করছে। কাউন্সিল অব কনজিউমার রাইটস বাংলাদেশ-সিআরবি সমাজের সর্বস্তরে ভোক্তা অধিকার আইন বিষয়ে সচেতনতা তৈরি ও তা বাস্তবায়নে কৃত্রিম মূল্যবৃদ্ধি, ভোক্তাদের পণ্যে ভেজালের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য একটি সামাজিক গোষ্ঠী হিসাবে কাজের সূচনা করে। সর্বস্তরে ভোক্তা ও ভাড়াটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত প্রাণ, স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কর্মরত এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য এবং ভোক্তাদের অধিকার এবং স্বার্থ সুরক্ষায় সদা সচেষ্ট।

ডিজাইনার কে.জি.এম সবুজ

সিআরবি’র প্রতিষ্ঠাতা ,মহাসচিব

কাউন্সিল অব ভোক্তা অধিকার বাংলাদেশ-সিআরবি’র কাজ কী ?

সিআরবি’র কাজ হলো, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সম্পর্কে স্বেচ্ছায় জনগণকে সচেতন করা। অধিকার বঞ্চিত ভোক্তাদের অধিকার লাভের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও আইনী সহায়তা প্রদান করা। ভোক্তারা কোন কোন খাতে কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে বিষয়ে গবেষণা পত্র ও সংবাদ প্রকাশ করা। স্থানীয় প্রশাসন ও জন-প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বা সহায়তায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সম্পর্কে সচেতনতা মূলক প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের সচেতনতা সনদ প্রদান করা। সনদ প্রাপ্তদের তথ্য ও সংবাদ প্রকাশ এবং অনলাইনে সংরক্ষণ করা। ভোক্তা অধিকার সুরক্ষায় সরকারের কাছে নতুন নতুন আইন বা বিধি প্রনয়ণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা। সরকারের ভোক্তা অধিকার কার্যক্রম বা অন্য যে কোন উন্নয়ন কাজে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে কাজ করা।

ভোক্তা-অধিকার কী কী ?

জাতিসংঘ স্বীকৃত ভোক্তা অধিকার ৮টি, যথা

* (১) মৌলিক চাাহিদা পূরণের অধিকার (সংবিধানে বিধৃত); * (২) নিরাপদ পণ্য বা সেবা পাওয়ার অধিকার, * (৩) পছন্দের অধিকার * (৪) তথ্য পাওয়ার অধিকার (তথ্য অধিকার আইন. ২০০৯-এ বিধৃত), * (৫) জানার অধিকার * (৬) অভিযোগ করা ও প্রতিকার পাওয়ার অধিকার *  (৭) ভোক্তা অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা লাভের অধিকার, * (৮) সুস্থ পরিবেশের অধিকার।

ভোক্তা কে ?

নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ ভোক্তা। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ব্যতীত-যিনি

*  সম্পূর্ণ মূল্য  পরিশোধ করে  বা সম্পূর্ণ  বাকিতে পণ্য  অথবা সেবা ক্রয় করেন,  * কিস্তিতে পণ্য অথবা সেবা ক্রয় করেন; *  আংশিক মূল্য পরিশোধ করে বা আংশিক  বাকিতে পণ্য অথবা সেবা ক্রয় করেন, * বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পণ্য ক্রয় বিক্রয় করেন।

কেন আমরা কাজ করি ? কেন এ বিষয়ে সবার কথা বলা উচি ?

আইনটি ২০০৯ সালে প্রনীত হলেও দুঃখজনক হলেও সত্য দেশের বেশীর ভাগ মানুষ এই আইন সম্পর্কে অবগত নয়। ভোক্তা অধিকার বিষয়ে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগে দেশের ৬৪টি জেলাতেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কর্মকর্তাদের অপেশাদারিত্ব ও আমলাতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে ভোক্তারা তাদের আইগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অধিদপ্তর নিজেদের কার্যক্রম শুধুমাত্র জরিমানা আদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। জরিমানা আদায়ের ক্ষেত্রে অধিদপ্তর যতটা উৎসাহী ব্যবসায়ীদের সচেতন করা বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে ততটা আগ্রহী নন। দেশে পিএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য কোচিং সেন্টার থাকলেও ব্যবসা পরিচালনার কোন কোচিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই ! ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কী করা উচিৎ বা কী করা যাবে না সেই শিক্ষা ব্যবসায়ীরা পাবে কোথায় ? জানার অধিকার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অন্যতম অনুষঙ্গ! কাউকে সচেতন না করে শাস্তি দেওয়াও অপরাধ। কোন দিক নির্দেশনা বা প্রশিক্ষণ না দিয়ে কি শুধুমাত্র জরিমানা আদায় করে ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব ? হাজার হাজার কোটি টাকার জরিমানা আদায় হলেও সে টাকা কোথায় ব্যয় হচ্ছে তা ভোক্তারা জানেন না ! জরিমানার আদায়কৃত অর্থ ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের। তাই আমাদের দাবী সেই অর্থ দিয়ে শুধু মাত্র ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের প্রশিক্ষন সচেতনতায় ব্যয় করা হোক। প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সার্টিফাইড করা হোক এবং সার্টিফিকেটধারী ব্যবসায়ীদের ভেজালের শাস্তি কঠোর করা হোক। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। হাস্যকর হলেও সত্য, অধিদপ্তরের ৬৪ জেলায় ওয়েব সাইট থাকলেও তার বেশীর ভাগ অকার্যকর এবং অভিযোগ করার সুযোগ নেই। তাই আমরা সমাজের সর্বস্তরে ভোক্তা অধিকার সচেতনতা ও সহায়তার কাজ করছি। অধিদপ্তরে অভিযোগ প্রদানের জন্য আমরা একটি ডিজিটাল অভিযোগ এ্যাপস চালু করেছি যা মোবাইল থেকেই অভিযোগ করা যায়। দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার কারণে  মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি দিন দিন খাদ্য ও ঔষধের ভোজাল চরম আকার ধারণ করেছে। তাই নিজের জীবন রক্ষার জন্য হলেও এ বিষয়ে সবার কথা বলা উচিৎ।

আমাদের দাবী :

 কেন যুক্ত হবেন “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার” আন্দোলনে……..

আমাদের দাবী : নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ সংশোধন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য “ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা”। আমরা আশা করি জনগণের প্রত্যাশা ও দাবীর ভিত্তিতে ২০০৯ সালে আমরা যেমন ভোক্তা অধিকার আইন লাভে সফল হয়েছি তেমনি আমরা জনমত গঠনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দাবী আদায়ে সফল হব। কারণ বানিজ্য মন্ত্রলালয় বা ব্যবসায়িক মনসিকতার কোন দপ্তরের মাধ্যমে কোন দিন ভোক্তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আমরা দেশে পঁচা গম সহ বহু ভেজাল খাদ্য পণ্য আমদানির সংবাদ পত্রিকায় পেয়েছি কিন্তু তা ধ্বংসের কোন সংবাদ পাইনি। কৌশলে সেসব অ-খাদ্য আমাদের হজম করানো হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদতলে বসে “জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর” কোনো দিন ভোক্তাদের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে না। পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও, চালের মূল্য বৃদ্ধি করে হাজার কোটি টাকা ভোক্তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। সরকারী উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও পেঁয়াজ মূল্য স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে অধিদপ্তর কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে কি পরিমান  পেঁয়াজ মজুদ আছে এবং কি পরিমান চাহিদা আছে সে তথ্যও তারা প্রকাশ করতে পারেনি। তাই আমরা দাবী করছি যত দিন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হয় ততদিনের জন্য যেন “জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর”কে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা  হোক। ঠিক যেমন প্রতিষ্ঠার আগে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়েছিল।“ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার” দাবী বাস্তবায়নে দেশব্যাপী আমাদের গণ-স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চলছে। স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে আমরা আমাদের গণ-স্বাক্ষর সম্বলিত দাবী জাতীয় সংসদে প্রেরণ করে মন্ত্রলালয় প্রতিষ্ঠার দাবী বাস্তবায়ন করবো। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ভোক্তা অধিকার আন্দোলনে যুক্ত সকল স্বেচ্ছাসেবক/কনজিউমার এক্টিভিস্টরা দেশবাসীর কাছে সম্মানিত হবেন এবং সর্বস্তরে মানুষের ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

ভোক্তা অধিকারের বর্তমান বাস্তবতা আমাদের প্রত্যাশা :  

             কুক্ষিগত ভোক্তা অধিকার, সুবিধা লুটেরার

আমাদের প্রত্যাশা : সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করবে। সেই লক্ষ্যে আমরা ১১ ফের্রুয়ারী ২০১৫ সালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরের ডিজি মহোদয়ের দপ্তরে আবেদনও জানিয়ে ছিলাম। হতাশা জনক হলেও সত্য বিগত ৫ বছরেও আমরা তার কার্যকর কোন উদ্যোগ দেখতে পাইনি। জন-প্রতিনিধিদের নিয়ে যে কমিটি গঠনের উদ্যোগ রয়েছে তা কাগজ পত্রে সীমাবদ্ধ। তাহলে সরকারের অর্থ অপচয় করে অধিদপ্তর আসলে কাদের স্বার্থ সুরক্ষা করছে ?

সরকারী অন্যান্য অধিদপ্তর

যে সকল সংগঠন সমাজ সেবা নিয়ে কাজ করছে তাদের সমাজ  সেবা অদিধপ্তর  অনুমোদন বা রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে এবং বছর বছর সমাজহিতকর কাজের জন্য অনুদান দিচ্ছে, যে সকল সংগঠন যুব উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে তাদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে, যে সকল সংগঠন নারী উন্নয়নে কাজ করছে তাদের নারী ও শিশু কল্যাণ অধিদপ্তর রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে, যে সকল সংগঠন মাদক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কাজ করছেন তাদের মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে, যে সকল সংগঠন শিল্প সম্প্রসারণে উদ্যোক্তা ও শিল্প স্থাপনে কাজ করছে তাদের শিল্প মন্ত্রণালয়ভুক্ত দপ্তর বিসিক রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে। প্রত্যেক অধিদপ্তর তাদের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ ও দক্ষ সংগঠন সমূহকে অনুদান বা প্রনোদনা দিয়ে অধিদপ্তরের উন্নয়ন সহযোগী হিসাবে উৎসাহিত করছে। কিন্তু একই সরকারের উন্নয়ন অংশিদার হিসাবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিজেদের কাজকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। তাদের এই দূরভিসন্ধিমূলক কর্মপদ্ধতির কারণে ভেজাল পণ্যে এখন বাজার সয়লাব। দেশের ১৭ কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপন ও ভোক্তা অধিকার চরম হুমকির সম্মুখীন। ভেজাল খাদ্য ও ওষুধের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্যান্সারসহ জটিল এবং কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটছে। ভোক্তাদের এই সব ক্ষয়-ক্ষতির দায় কি অধিদপ্তর নেবে ? অধিদপ্তরের জন-সম্পৃক্ততাহীন অস্বচ্ছতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে যে সকল শিশু খাদ্য, ভেজাল ও নি¤œ মানের খাদ্য পণ্য দেশে প্রবেশ করছে তার তথ্য সাধারণ মানুষের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যাচ্ছে এবং পাড়ায় পাড়ায় ভেজাল ঔষধ ও খাদ্য পণ্য তৈরি হচ্ছে। এসব ভেজাল পণ্যের পৃষ্টপোষক অধিদপ্তর ও বিএসটিআই-এর কিছু অসাধু কর্মকর্তা। ভেজালের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে গণ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারলে, শুধু মাত্র অধিদপ্তরের বেতনভুক্ত কর্মী ও কর্মকর্তাদের দিয়ে বর্তমান ভেজালের মহামারী থেকে দেশকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়।

কেন এই প্রশ্নবিদ্ধ প্রচেষ্টা ?

 সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় জাতীয় সমাজকল্যণ পরিষদ-এর মাধ্যমে বহু সংগঠনকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান করেছে যাদের নামকরণ “আগ্রাবাদ সমাজ কল্যাণ পরিষদ” বা “বি-বাড়ীয়া সমাজ কল্যাণ পরিষদ” ইত্যাদি। জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদতো কখনো প্রশ্ন তোলেনি দেশের সকল সমাজ কল্যাণ কেবল জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদ করবে? তবে ভোক্তা অধিকার নিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এলার্জি কোথায় ? দেশে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রয়েছে, তার পরও হাজার হাজার মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার বিষয়ে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনতো কখনো বলেনি দেশে মানবাধিকার নিয়ে কেবল তারাই কাজ করবেন, অন্যরা করতে পারবে না । কিন্তু জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরতো তৃণমূল পর্যায়ে জন-সচেতনতার কাজ করতে পারছেন না। বরং যারা ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ সম্পর্কে জন-সচেতনতায় কাজ করছেন তাদেরও নানান কায়দায়/ কৌশলে বাধা সৃষ্টি করছে অধিদপ্তর। আমারা বিশ্বাস করি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অংশগ্রহণ ব্যতিত ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা সম্ভব নয় এবং সেই ব্যর্থতার চিত্র আখন দৃশ্যমান। ভোক্তাদের সুরক্ষার জন্য পণ্য কি মূল্যে আমদানী করা হচ্ছে? কোন গোডাউনে কি পরিমান পণ্য সংরক্ষিত আছে এমন তথ্য অধিদপ্তর প্রকাশ করার উদ্যোগ এখনো দেখা যায় নি। তারা এক ধরণের গোপনীয়তা এবং ব্যবসায়ীদের লুটের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছেন কোন এক অদৃশ্য শক্তিতে। সে কারণেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং গণসম্পৃক্তা এড়িয়ে চলার কৌশল অবলম্বন করছে “জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষ অধিদপ্তর”। “যড়যন্ত্রকারিদের হাতিয়ার গোপনীয়তা-জুলিয়ান এ্যাসেঞ্জ, উইকিলিকস। আমরাও কি তাহলে সেই যড়যন্ত্রের শিকার ?

সংস্কার জরুরী

দেশের বেশীর ভাগ মানুষই মনে করে একই প্রতিষ্ঠানকে ভেজাল অপরাধের  জন্য শাস্তির  আওতায় না এনে বার বার জরিমানা করে অব্যাহতি প্রদান করাটাকে অধিদপ্তর কর্তৃক ভেজাল কারীদের প্রশ্রয় দেওয়ার সামিল। কারণ, জরিমানার অর্থে মুক্তি পাওয়া ভেজাল কারীরা আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠেন এবং ভেজাল বাড়িয়ে ভোক্তাদের কাছ থেকে সেই টাকা আদায় করেন। দোকানীদের ভেজালের কারণে ভোক্তা ঠকলো আর জরিমানা করে অর্থ পেল অধিদপ্তর, তাতে ভোক্তার কি উপকার হল ? জরিমানার অর্থ ভোক্তার পাওয়ার ক্ষেত্রেও সুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। কাদের জরিমানার টাকা দেওয়া হচ্ছে মাসিক ভিত্তিতে কোন তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না চলছে নয় ছয়। ভেজালের কারণে দোকান বন্ধ করা বা দোকানীকে জেল প্রদানের নজির নেই বললেই চলে। জন-জীবন হুমকিতে ফেলে কোটি টাকার ভোজাল পণ্য বিক্রয় করে লক্ষ টাকা জরিমানা দিয়ে মুক্তি পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাই আইন ও অধিদপ্তরের সংস্কার জরুরী। অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ না দিয়ে সেই জরিমানার টাকায় কোথায় খরচ করছন তা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে ! দেশে ভেজাল প্রতিরোধে এই অস্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা কায়েমের মাধ্যমে অধিদপ্তরের লোকজন কোন আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন কি না তা খতিয়ে দেখা এখন সময়ের দাবী। জাতীয় পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সুরক্ষার স্বার্থে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মত ‘জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’কে গণমুখী করে দেশের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যুব সংগঠন, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠন সমূহকে স্থানীয় ভাবে সম্পৃক্ত করে ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করার দাবী জানাচ্ছি।

শ্রীমতি মালা ব্যানার্জী

ভোক্তা অধিকার ও আমাদের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা

আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও তাদের রাজ্য পশ্চিম বঙ্গ ভোক্তা অধিকার ও খাদ্য নিরাপত্তায় অনেক বেশী অগ্রসর। সেখানে  সেখানে ভোক্তাদের জন্য রয়েছে উপভোক্তা অধিকার মন্ত্রনালয় এবং মন্ত্রী । পশ্চিম বঙ্গ সরকার ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠায় “কনজিউমার এসোসিয়েশন ব্যুরো” সহ প্রায় ৬৭টি বেসরকারী সংস্থাকে সরকার তথা উপভোক্ত অধিদপ্তর পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আইনী সহায়তা প্রদানের জন্য এক একটি প্রতিষ্ঠনকে তিন লক্ষ রুপী হিসাবে বার্ষিক অনুদান প্রদান করছে রাজ্য সরকার। ভোক্তা অধিকার উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তার কৌশল বিষয়ক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস-২০১৯-এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে “ফেডারেশন অব কনজিউমার  এসোসিয়েশন পশ্চিমবঙ্গের” সভাপতি ও কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী বিশ্ব নন্দিত কনজিউমার এক্টিভিস্ট  শ্রীমতি মালা ব্যানার্জী সিআরবি’র  আমন্ত্রণে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি ভোক্তা অধিকার-এ অনন্য অবদানের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেন এবং মেরিল্যান্ড ইউএসএ-এর অনারেবল সিটিজেন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।মূলত তাঁর অভিজ্ঞতা ও কর্মকৌশল সম্পর্কে অবগত হতেই আমাদের এইর উদ্যোগ। আমরা তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার সম্প্রসারণ ও পাবলিক রিটেল পদ্ধতি/ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টিতে কাজ করছি। তিনি তাদের সফলতায় সরকার, ব্যবসায়ী বা ভোক্তাদের কী ধরণের ভূমিকা ছিল আমরা তা অনুসরণের চেষ্টা করছি। কারণ, আমাদের দেশে একজন দিন মজুরের পারিশ্রমিক পাঁচশ টাকা কিন্তু দেশে গরুর মাংস বিক্রি হয় ছয়শ বা ছয়শ পঞ্চাশ টাকায়। এখানে পাঁচশগ্রাম বা দুইশ পঞ্চাশ গ্রাম মাংস বিক্রীর প্রচলন নেই। পরিবারের খরচ নির্বাহ করে একজন শ্রমিকের পক্ষে মাংস কেনা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাহলে ঐ শ্রমিক পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা কোথায় ? অপুষ্টিতে বেড়ে ওঠা শ্রমিক পরিবারের এই শিশুরা একদিন আমদের রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে ! এই সমস্যা প্রতিকারে সবাইকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা উচিত। আমরা প্রত্যেক বাজারে একটি করে পাবলিক রিটেল দোকান চালু করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে উৎসাহিত করছি। যেখান থেকে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ভারতের মত দুশ গ্রাম বা আড়াইশ গ্রাম মাছ মাংস ক্রয় করতে পারবে।

কে ভোক্তা অধিকার কর্মী বা কনজিউমার এক্টিভিস্ট ?

যে সামাজিক অপরাধে সম্পৃক্ত নয়, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, নিজের সৎ উপার্জিত অর্থের কিছু অংশ ও সময় ব্যয় করে ভোক্তা অধিকার অর্জনে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করেন এবং অধিকার বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনিই ভোক্তা অধিকার কর্মী বা কনজিউমার এক্টিভিস্ট। (ভোক্তা অধিকার সার্বজনীন অধিকার, তবে সিআরবি’র নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত নয় )

ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠায় কেন নেটওয়ার্ক সংগঠন বা সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন ?

প্রত্যেকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নিজ নিজ কর্ম এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করেন। উন্নয়ন কর্মসূচী বা কাজের বিষয় ভিন্ন হলেও তাদের সদস্যরা সকলেই ভোক্তা। তাই তাদের ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা ও সচেতনতা জরুরী। দেশের বেশীর ভাগ  স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনেরই ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সচেতনতা বা সহায়তা কর্মসূচী নেই।  তাই  সে সব সংগঠনের সদস্যরা ও স্থানীয় জনসাধারণ ভোক্তা অধিকার সচেতনতা ও সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমরা স্থানীয় পর্যায়ে সমমনা সংগঠন সমূহের সাথে সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক / উন্নয়ন চুক্তির স্বাক্ষরের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সমূহের সহযোগিতা নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে ভোক্তা অধিকার সচেতনতা ও সুরক্ষার বলয় তৈরি করব। নেটওয়ার্ক ভুক্ত প্রতিটি সংগঠনেই ভোক্তা অধিকার হেলপ ডেস্ক বা সুরক্ষা দেওয়াল থাকবে। যেখান থেকে সংগঠনের সদস্য ও স্থানীয় জনগণ তথ্য ও আইনী সহায়তা পাবেন। ভোক্তা অধিকারের ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত বিষয় নিয়ে আমরা অঞ্চল ভিত্তিক গণশুনানীর আয়োজন করবো এবং স্থানীয় পর্যায়ে স্কুল কলেজ ও বিশ্ব-বিদ্যালয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে।

১৫মার্ ২০২০ইং সংশোধান : ৩০অক্টোবর ২০২১ইং